চা বিক্রেতার সামছুর স্বপ্ন

প্রকাশঃ জানুয়ারি ৩০, ২০১৫ সময়ঃ ৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডটকম:

 

Naogaon-Cha-bikreta-11.3.14

নওগাঁর রাণী নগর রেল স্টেশন। খুব ভোরে একজন মানুষ চোখ মুছতে মুছতে প্লাটফর্ম ধরে হেঁটে এসে দোকানের ঝাঁপ তুলছেন। ৪৪ বছর ধরে একই ভাবে তিনি প্রতিদিন খুব সকালেই আসেন। তার বাবার হাত ধরে এ পথটি চিনেছিলেন তিনি পাকিস্তান শাসন আমলে। আজ বাবা না থাকলে ও প্রতিদিন এ পথ ধরে আসেন তিনি। এই পথ ধরে হাজার হাজার মানুষের চলাচল। তারই পাশে ছোট্ট একটি দোকানে চা বিক্রি করে এগিয়ে চলে তার জীবনের প্রতিটা ক্ষণ। বয়স ষাটের কোঠায়। সামছুদ্দিন প্রামানিক । জীবনের শেষ সময়ে এসেও এক কাপ চা তুলে দিচ্ছেন উপজেলার রেল স্টেশনে চা প্রেমিকদের হাতে।

উপজেলার পূর্ব বালুভরা গ্রামের মৃত ছকিমুদ্দিন এর ছেলে সামছুদ্দিন জানান, তার পিতা পাকিস্তানি শাসনের সময় ১৯৫২ সালে এই রাণীনগর রেল স্টেশনে সর্ব প্রথম ছোট্ট একটি চা স্টল দিয়ে এই চা বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। তিনি পরিবারের তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ। পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করে বাবার সঙ্গে এই চা স্টলে চা তৈরি করার কাজে সাহায্য করতেন। এ ভাবে চা বিক্রি করেই তা পরিণত হয়েছে তার পেশা হিসেবে।

পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে এই চা স্টলটি পাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকার লড়াই। আর পিতার দেওয়া এই চা স্টলটিকে আশীর্বাদ মনে করে এর মাধ্যমেই এখনও জীবন-যাপন করে যাচ্ছেন সামছুদ্দিন। তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন অনেক পড়াশোনা করে শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে একটি ভালো চাকরি করার আশা ছিল কিন্তু পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে তার সেই স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে গেছে।

এই মানুষটি বলছিলেন সল্প এ আয়ের মধ্য দিয়েই তিনি তার বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন । কলেজে পড়াচ্ছেন একমাত্র সন্তানকে। স্নাতক শেষ পর্বের ছাত্র সে। শত অভাব-অনটনের মধ্যেও যে তিনি তার সন্তানকে উচ্চ শিক্ষা দিতে পারছেন এটাই তার জীবনের বড় পাওয়া। শুধু তার সন্তানের পড়াশুনা শেষে ভালো একটি চাকরি পেলেই তার জীবনের সকল চাওয়া পূর্ণ হবে বলে তিনি বুকে আশায় বেধে আছেন সংগ্রামী মানুষটি।

তিনি বলেন, তার এই অক্লান্ত পরিশ্রম দেখে তার ছেলে কলেজ পাঠ শেষ করে এসে সহায়তা করে চা স্টলে। সারাদিন চা বিক্রয় করে তিনি ৩শ থেকে ৪শ টাকা আয় করেন। আর এই সীমিত আয় দিয়েই সন্তানের পড়াশুনার খরচ সহ পরিবার চালাতে হয়। এতে অনেক সময় তাকে হিমশিম খেতে হয় সংসারের খরচ বহন করতে। অর্থের অভাবে তিনি তার দীর্ঘদিনের চা স্টলটিও মেরামত করতে পাছেন না।

আধুনিকতার এই সময়ে অনেকেই বৃদ্ধের এ ভাঙা স্টলে অনেক সময় চা পান করতে ইত:স্ত বোধ করেন বলে জানান তিনি। আগের সময়ে এই রেল স্টেশনে অনেক লোকাল ট্রেন দাঁড়াতো এবং অনেক লোকের সমাগম হত তাই তখন আয়ও বেশ ভালো হত। সেই সময়ের তুলনায় তার আয় অনেক কমেছে কিন্তু বেড়েছে এই অভাবী সংসারের ব্যয়। তবুও তিনি হাল ছাড়েননি তার একমাত্র ছেলেকে উচ্চতর পড়াশুনায় স্বশিক্ষিত করতে। তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন যে, তার একমাত্র ছেলে উচ্চতর পড়াশুনা শেষ করে একটি চাকুরি নিয়ে সমাজে একজন ভালো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তার বাবার মুখ উজ্জল করবে।

প্রতিক্ষণ/এডি/মাসুদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G